নতুন তৃণমূল ও অভিষেক এবং ভবিষ্যত।
জ্যোতি প্রকাশ মখার্জ্জী:- আনন্দ বাংলা ডেস্ক:-গত কয়েকমাস ধরে কলকাতার কোনো কোনো জায়গায় কয়েকটি পোস্টারে শুধুমাত্র তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জ্জীর ছবি দ্যাখা যাচ্ছে। মমতা ছাড়া অভিষেক অথবা মমতা ছাড়া তৃণমূলের ফ্লেক্স - এই আপাত অসম্ভব পোস্টার দেখে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তথাকথিত অথবা স্বঘোষিত 'মাইণ্ড সেট' করা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তথা বিশ্লেষকরা চমকে উঠেছে এবং নিজ নিজ ধারণা অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিতেও শুরু করেছে। চমকানোরই কথা।
কারণ কংগ্রেস সভাপতি দেবকান্ত বরুয়ার বিখ্যাত উক্তি India is Indira বা Indira is India-র মত Mamata is Trinamul অথবা Trinamul is Mamata- এর বাইরে কিছু হয়না। গত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে এটাই চলে আসছে। হঠাৎ কেন এই ব্যতিক্রম? বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলে অজিত পাঁজা, সুব্রত মুখার্জ্জী প্রমুখের মত জনপ্রিয় নেতারা ছিলেন। সারা রাজ্যের মানুষ এদের এক ডাকে চিনতেন।
জেলা বা ব্লক স্তরে অনেকেই আছেন যাদের স্হানীয়ভাবে সাধারণ মানুষ ভালভাবেই চেনে বীরভূম ও তার আশেপাশের এলাকার এক ও অদ্বিতীয় 'সুপার হিরো' কেষ্ট মণ্ডল, সম্ভবত সারা দেশের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ তার নাম শুনেছে, নামটাই যথেষ্ট বিরোধীদের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দলের লোকজন ভয়ে তটস্থ আসানসোল এলাকায় প্রচারের অন্তরালে থাকা মলয় ঘটক প্রায় সমস্ত শ্রেণির মানুষের কাছের মানুষ এরকম তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী আছে যারা নিজ নিজ এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় তারপরও তৃণমূল ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয় মমতার ব্যানার্জ্জীর নামে তিনিই নিজেকে সমস্ত আসনের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করতেন এবং জনগণের কাছে ভোট চাইতেন তৃণমূলে একজনকেই দলের কর্মী সহ সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জ্জী কিন্তু কি এমন ঘটল হঠাৎ পোস্টার থেকে মমতা ব্যানার্জ্জীর ছবি উধাও এবং এটা নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন জনসভায় অভিষেক নাকি বলছেন - আগামী ছ'মাসের মধ্যে নতুন তৃণমূল দ্যাখা যাবে যেটা জনগণ চায় এটা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হলো আলোচনা, বিরোধীদের সমালোচনা সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের উদ্দেশ্যে বিরোধীদের দিক থেকে ছুটে আসে কটাক্ষ তাদের মূল বক্তব্য - তাহলে কি তৃণমূল থেকে 'পিসি' মমতাকে সরিয়ে 'ভাইপো' অভিষেক সমস্ত ক্ষমতার ভরকেন্দ্র হয়ে উঠবে? সমাজ, সংসার, রাজনীতি সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই 'জেনারেশন গ্যাপ' বলে একটা শব্দ বন্ধনী আছে সিনিয়ররা সবসময়ই চায় জুনিয়ররা তাদের নির্দেশ অন্ধভাবে মেনে চলুক বা প্রশ্নহীনভাবে অনুসরণ করুক অন্যদিকে জুনিয়ররা চায় সিনিয়ররা যেন তাদের বেশি জ্ঞান না দেয় জুনিয়ররা বুঝতেই চায়না সিনিয়ররা স্বাভাবিক ভাবেই বড় হয়েছে এবং তাদের বয়সটা পেরিয়ে এসেছে মমতার সঙ্গে যারা রাজনীতি শুরু করেছিল তাদের বয়সটা অনেক দিন আগেই পঞ্চাশ অতিক্রম করে ষাটের চৌকাঠে ধাক্কা দিচ্ছে কেউ কেউ আবার ষাট অতিক্রম করে সত্তর হয়ে গ্যাছে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তাদের গ্যাপ অনেকখানি তবে এটা মানতেই হবে রাজনীতিতে প্রকৃত প্রবীণ অভিজ্ঞদের গুরুত্ব আলাদা দলে তাদের ভূমিকাকে সম্মান জানাতেই হবে প্রবীণ ও নবীনের যৌথ মিলনে দল প্রকৃত শক্তিশালী হয়ে উঠবে সম্ভবত ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের ফল বের হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জ্জী বললেন - 'এক ব্যক্তি, এক পদ' অর্থাৎ কোনো নেতাই আর একাধিক পদ হোল্ড করতে পারবে না তৃণমূলের প্রায় শুরু থেকেই কলকাতার অধিকাংশ নেতার একাধিক দলীয় পদ ছিল সেভাবে জেলা না চিনলেও তারাই ছিল জেলার পর্যবেক্ষক জেলা সভাপতি সহ অধিকাংশ জেলা নেতাদের কার্যত কোনো গুরুত্বই ছিলনা এরফলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীভবনের পরিবর্তে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছিল অভিষেক সেটাই 'রিপিট' করেছেন এবং বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করছেন অভিষেকের ভাবনাটা বাস্তবে পরিণত হলে তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্গে অন্য দলগুলোও চাপে পড়ে যাবে 'বৃদ্ধাশ্রম' কথিত সিপিএম তখন নতুনদের স্পেস দিতে বাধ্য হবে নতুন মুখ নতুন ভাবনা হয়তো দলটাকে আবার নতুন দিশা দেখাবে গণহত্যার পথ ত্যাগ করে গণ উন্নতির চেষ্টা করবে বিজেপিও হয়তো ধীরে ধীরে দলের প্রতি আনুগত্য যুক্ত কর্মী খোঁজার চেষ্টা করবে দীর্ঘদিন ধরেই একদল ব্যর্থ নেতা দেখতে দেখতে বিজেপির কর্মীরা ক্লান্ত সবচেয়ে বড় চাপ থাকবে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসের তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা কংগ্রেস ঘরানার এখনো কংগ্রেসের প্রতি বহু তৃণমূল কর্মীর আলাদা দুর্বলতা আছে সিপিএমের হার্মাদদের হাতে আক্রান্ত কংগ্রেস কর্মীরা (যারা এখনো কংগ্রেসে আছে) এবার হয়তো নিজেদের স্বার্থে দলের উপর তলার নেতাদের সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানো মেনে নেবেনা অভিষেকের নতুন তৃণমূলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কি আসন্ন বিপদ আঁচ করে বিরোধীরা অভিষেকের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে তির্যক কটাক্ষ?