148
thumb Captured By: জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
              • 29-10-2022   11:50 PM •      Captured By: জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী   148

বিধ্বংসী আগুনে শেষ হয়ে গ্যালো ক্যানিংয়ের সরদার বাড়ি।

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী: আনন্দ বাংলা ডেস্ক:- সেদিন ছিল কালীপুজো। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের তালদি রাজাপুর পূর্ব পাড়ার বাসিন্দারা তখন দীপাবলীর উৎসবে মত্ত। প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালাতে ব্যস্ত।

ওদিকে খালের পাড়ে বসবাসরত সরদার পরিবারের কর্তা পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কেনারাম বাবু পেশাগত কাজে গ্যাছেন কলকাতা। চন্দ্রা দেবী তার তিন কন্যা সোমা, মঙ্গলা ও লক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে পাশের বাড়িতে গ্যাছেন পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে। কিন্তু তারা জানতনা একটু পরেই কী সর্বনাশ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। হঠাৎ বিধ্বংসী আগুনের লেলিহান শিখা ছাপিয়ে গ্যালো মোমবাতির আলোকে।

মুহূর্তের মধ্যে পুড়িয়ে ছাই করে দিল তাদের সমস্ত আসবাব, বাসনপত্র, পোশাক পরিচ্ছদ সহ গৃহস্থালির সবকিছু এমনকি আগুনের হাত থেকে রেহাই পেলনা তিন কন্যার বই, খাতা সহ অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী এবং পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র ও ব্যাঙ্কের পাশবই এমনকি কেনারাম বাবুর কাজের যন্ত্রপাতিগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গ্যাছে নাই খাবার মত খাদ্যসামগ্রী সর্বগ্রাসী আগুন সেটাও গ্রাস করে নিয়েছে সম্বল সেই মুহূর্তে পড়ে থাকা পরনের পোশাকটুকু সেই সময় চন্দ্রা দেবী যদি তার তিন সন্তানকে নিয়ে পাশের বাড়িতে না থাকতেন হয়তো আগুন তাদেরও গ্রাস করে ফেলত মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই একটা সুখের সংসার কার্যত পথে বসে গ্যালো সব হারিয়ে দিশেহারা সরদার পরিবার কিন্তু ছোট্ট লক্ষী বুঝে উঠতে পারেনি কী চরম সর্বনাশ হয়ে গ্যাছে তাদের পরিবারের স্হানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে - তখন প্রায় সন্ধ্যা ছ'টা সবাই দীপাবলীর আনন্দে মত্ত হঠাৎ আগুন এবং সঙ্গে গ্যাস সিলিণ্ডার বিষ্ফোরণের শব্দ শুরু হয় ছুটোছুটি প্রথমে স্হানীয়রা নিজেরাই চেষ্টা করে আগুন নেভাতে কিন্তু তীব্রতা এত বেশি ছিল সেটা তাদের পক্ষে নেভানো সম্ভব হয়নি খবর পেয়ে দমকলের একটি গাড়ি আসে কিন্তু সংকীর্ণ রাস্তার জন্য তারা সমস্যায় পড়ে অবশেষে আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন যখন আয়ত্বে আসে তখন সব শেষ স্হানীয়দের অনুমান গ্যাস সিলিণ্ডার বার্স্ট করে হয়তো আগুন লেগেছে দমকল বাহিনীর সদস্যরা এব্যাপারে কিছু বলতে চাননি এই ঘটনার পর আবার প্রমাণিত হলো মানবিকতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি সরদার বাড়ির দুর্দশার খবর পেয়ে পাশে এসে দাঁড়ায় 'সুখের চাদর' সিদ্ধান্ত নেয় ওই পরিবারটিকে তাদের ঘর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় এ্যাসবেষ্টাস দিয়ে তারা সাহায্য করবে এবং ইলেকট্রিকের কাজের জন্য কেনারাম বাবুকে যন্ত্রপাতি কিনে দেওয়া হবে শুধু তাই নয় সংস্হাটি পরিবারটিকে শীতের জন্য কম্বল ও শীতের পোশাক এবং তিন মেয়ের বই-খাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্যানিংয়ের একটি সংগঠনও কিনে দেয় কিছু এ্যাসবেষ্টাস কলকাতার একটি সংগঠন 'প্রক্সসিমিটি' ঘরের চারিদিক ঘেরার জন্য কিনে দেয় টিন স্হানীয় কিছু মানুষ ঘর তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশ দিয়ে সাহায্য করে পুড়ে যাওয়া বাড়ির ছাইয়ের স্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে চন্দ্রাদেবী বললেন - জানিনা মেয়ে তিনটের মুখে কাল কি তুলে দেব! অষ্টম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া মেয়েদুটো হয়তো একটু বুঝবে কিন্তু ছোটটা? সামনে পরীক্ষা বইখাতা সব পুড়ে গ্যালো কি করে যে ওরা পরীক্ষা দেবে? এমনকি পরনের পোশাক নিয়েও তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন কথা বলতে বলতে তার অসহায় দৃষ্টি চোখের জলে ঝাপসা হয়ে গ্যালো গণদর্পণের সম্পাদক মণীশ সরকার বললেন - উৎসবের মুখে সব শেষ হয়ে যাওয়া পরিবারটির কথা ভেবে সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল যাইহোক আপাতত কয়েকটি সংস্হা ওদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাময়িকভাবে কিছুটা সুরাহা হলো আশা করা যায় আরও কিছু সংস্হা ঐ পরিবারটির পাশে দাঁড়াবে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবারটি আবার হয়তো বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পাবে