110
thumb Captured By: জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
              • 29-11-2022   11:55 PM •      Captured By: জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী   110

পার্থ ও অনুব্রত - দুই ধরনের সিদ্ধান্ত কেন?

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:- আনন্দ বাংলা ডেস্ক:-একে কী বলা যাবে - এক যাত্রায় পৃথক ফল? যদিও এটা তীর্থযাত্রা নয় - জেলযাত্রা। আপাতত অপ্রমাণিত অভিযোগ ও দাবির ভিত্তিতে দু'জনের জেলযাত্রা। যখন বিচার পর্ব শুরু হবে তখন জানা যাবে ওরা কতটা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।

প্রথম জন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং শিল্প ও বাণিজ্য, তথ্য ও প্রযুক্তি, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা, শিল্প পুনর্গঠন ও পরিষদীয় বিভাগের মন্ত্রী। ২০০১ সাল থেকে একটানা তৃণমূলের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। দল ক্ষমতা লাভের আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলীয় পদ অলংকৃত করতেন।

ঈর্ষণীয় ছিল তার দলীয় পোর্ট ফোলিও কিন্তু গত ২৩ শে জুলাই শিক্ষা সংক্রান্ত নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করে তারপর থেকেই দ্রুত বদলে যায় পরিস্থিতি গ্রেপ্তারের পর তৃণমূল তাকে মন্ত্রীত্ব সহ সমস্ত দলীয় পদ থেকে অপসারণ করে অপশন থাকলে হয়তো বিধায়ক পদ থেকেই সরিয়ে দেওয়া হতো এখন শুধুই তার নামের আগে 'প্রাক্তন' মন্ত্রী ট্যাগ লাইন যুক্ত হচ্ছে নির্মম পরিহাস!!! অপরজন অনুব্রত মণ্ডল যিনি মূলত দলীয় মহলে 'কেষ্ট'দা নামে বেশি পরিচিত বীরভূম জেলার তিনি সভাপতি ছিলেন একইসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের দায়িত্ব ছিল তার উপর গরু পাচারের অভিযোগে গত ১১ ই আগষ্ট সিবিআই বোলপুরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পরে ১৭ ই নভেম্বর ইডি তাকে হেফাজতে নেয় আপাতত তিনি আসানসোলের সংশোধনাগারে বন্দী দু'জনের গ্রেপ্তারের মাঝে মাত্র ১৯ দিনের ব্যবধান থাকলেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সমস্ত রকম দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও পূর্ব বর্ধমানের তিনটে ব্লক বাদ দিলে কেষ্ট মণ্ডল কিন্তু বীরভূমের জেলা সভাপতি পদে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন কেন একজনকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো এবং অপর জনকে রাখা হলো সেই সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব দিতে পারবে আমরা কেবল অনুমান করতে পারি পার্থ বাবু সাংগঠনিক নন তাত্ত্বিক নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন দলীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে তিনি যে সফল ছিলেন সেটাও বলা যাবেনা বিভিন্ন সময়ে তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য দলকে বেকায়দায় ফেলেছে যদি কখনো তৃণমূলের পতনের কারণ চিহ্নিত করতে বলা হয় তার আশি শতাংশ দায় চাপবে পার্থ বাবুর দায়িত্বে থাকা শিক্ষা দপ্তরের উপর শোনা যায় 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি কার্যকর করার সময় তিনি নাকি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুতরাং তাকে ছেঁটে ফেলতে তৃণমূলের সময় লাগেনি অন্যদিকে কেষ্ট মণ্ডল পুরোপুরি সংগঠনের লোক তার দাপটে একদা লালদূর্গ বীরভূম সবুজদূর্গে পরিণত হয়েছে এমনকি তার দায়িত্বে থাকা পূর্ব বর্ধমানের তিনটি ব্লক তৃণমূলের দখলে দায়িত্বে থাকলেও যদিও অন্যান্য জেলায় তাকে সেভাবে সফল হতে দ্যাখা যায়নি বিরোধী দলের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দলের নেতা-কর্মীরা তার ভয়ে কুঁকড়ে থাকত উল্টাপাল্টা মন্তব্য করলেও সংগঠনটা তিনি ধরে রেখেছিলেন কেষ্টর এলাকায় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বকে সেভাবে মাথা ঘামাতে দ্যাখা যায়নি তার উপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত ছিল দল তার গ্রেপ্তারের পর ভাবা হয়েছিল এবার হয়তো তৃণমূল বিরোধী দলগুলো বীরভূম সহ কেষ্টর এলাকায় তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নামবে কিন্তু কোথায় কি? কার্যত বিরোধী শূন্য বীরভূম তার অনুপস্থিতিতেও কোনো আন্দোলন নাই এরাই আবার 'আন্দোলন লগ্নে' জন্ম মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখে এসব শুনলে একইসঙ্গে বিড়াল ও বিড়ালের মুখে ধরা ইঁদুর হেসে উঠবে এলাকায় কান পাতলে বিরোধী দলের কর্মীদের কাছ থেকে শোনা যাবে যেভাবে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর বিপদের সময় দলীয় নেতৃত্ব পাশে থাকেনি তাতে কে আর ঝুঁকি নেবে? তাছাড়া কেষ্ট মণ্ডল জেল থেকে ফিরে আসার পর একই ঘটনার যে পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা তারই নিশ্চয়তা কোথায়? বিরোধী দলগুলোকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখতে হয়তো তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেষ্ট মণ্ডলকে বীরভূম জেলা সভাপতির পদে রেখে দিয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন সভায় কেষ্ট মণ্ডলের বিরুদ্ধে দলের কর্মীদের ক্ষোভ দ্যাখা যাচ্ছিল কেষ্টকে কেন্দ্র করে দুটো গোষ্ঠী সক্রিয় হচ্ছিল তার অনুপস্থিতিতে দলের রাশ কার হাতে থাকবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল শোনা যাচ্ছিল কেষ্ট মণ্ডল নাকি দু'জনের কথা শুনে দলীয় কর্মীদের চলার পরামর্শ দিয়েছিল এটা নিয়েও ক্ষোভ দ্যাখা দিচ্ছিল সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন এই পরিস্থিতিতে সেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিলে দলের চরম সর্বনাশ অনিবার্য হয়তো এইসব কিছু চাপা দেওয়ার জন্যেই দল তার ক্ষেত্রে অন্য রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রত্যাশিত সাফল্য পেলে, কিছু পঞ্চায়েত হাতছাড়া হলেও সেই সম্ভাবনা বেশি, তৃণমূল নেতৃত্ব কেষ্ট মণ্ডল সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দ্যাখার