119
thumb Captured By: নীহারিকা মুখার্জ্জী
              • 23-02-2023   5:30 PM •      Captured By: নীহারিকা মুখার্জ্জী   119

ভিন্ন স্বাদের বই প্রকাশিত হলো মঙ্গলকোটের লেখিকার।

নীহারিকা মুখার্জ্জী:- মঙ্গলকোট:- কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে ৪৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স এণ্ড বুক সেলার্স গিল্ড সূত্রে জানা যাচ্ছে এবার ৫৭০০ টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় বারো শতাংশ নতুন বই।

এই বইগুলির মধ্যে আবার অধিকাংশ কবিতার বই এবং তাদের মধ্যে অনেকগুলি পাঠকের কাছে আদরণীয় হয়ে উঠেছে। সাধারণত কবিতা বা ছোটগল্পের হাত ধরে পাঠকদের কাছে সহজেই পৌঁছানো যায়। তাই নতুনদের মধ্যে কবিতা বা ছোটগল্প লেখার আগ্রহ বেশি থাকে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে হেঁটে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামের তৃণা মুখার্জ্জী সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের সৃষ্টি নিয়ে হাজির হলেন পাঠকের দরবারে।

তার আলোচনামূলক প্রবন্ধ - 'বাংলা ছোটগল্পে চোর' ইতিমধ্যে পাঠক সমাজে সাড়া ফেলে দিয়েছে বিশিষ্ট অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের হাত ধরে এই বইটি দিনের আলোর মুখ দেখে সম্ভবত এই প্রথমবারের জন্য কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ইতিহাসে এই ধরনের বই প্রকাশিত হলো বইটিতে বাংলার বিখ্যাত দশজন লেখকের চোর সংক্রান্ত ছোটগল্পে চোরদের প্রতি লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেহেতু প্রতিটি চরিত্র আলাদা তাই চরিত্র বিশ্লেষণগুলো ভিন্নমাত্রা পেয়েছে লেখিকা কেবলমাত্র বিখ্যাত লেখকদের চোর চরিত্রগুলি নিয়ে আলোচনাতে থেমে থাকেননি গল্পের বাইরেও তিনি তিন ধরনের চোরের কথা আলোচনা করেছেন - সাধারণ চোর, মুখোশধারী চোর ও কর্পোরেট চোর সাধারণ চোররা ঘৃণিত হলেও অপর দুটি স্তরের চোররা কেন আলাদা মর্যাদা পাবে সেই বিষয়টি তিনি সামনে আনার চেষ্টা করেছেন লেখিকার মতে - সাধারণ চোররা সমাজের ক্ষতি করলেও অপর দুই শ্রেণির চোর আরও বেশি ক্ষতি করে বইটি সম্পর্কে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিখ্যাত লেখক 'বাঞ্ছারামের বাগান' মনোজ মিত্র বলেন - আমি আমার অনেক নাটকে চোরদের প্রধান চরিত্র করে উপস্থাপিত করেছি চোরদের নায়ক হিসাবে ভেবে সেভাবে গল্প বা সাহিত্যে আলোচনা করা হয়না, ঘৃণিত চরিত্র হিসাবে দ্যাখা হয় নতুন লেখক-লেখিকারাও ঝুঁকি নিতে চায়না সেদিক দিয়ে বিচার করলে লেখিকা সস্তা প্রচারের পরিবর্তে ভিন্নধর্মী সৃষ্টি নিয়ে পাঠকের দরবারে উপস্থিত হয়েছেন তার আশা তৃণার এই সৃষ্টি রসিক ও সিরিয়াস পাঠক সমাজে সমাদৃত হবে তিনি আরও বলেন - আগে পেলে এই বইটির অনুকরণে চোরদের নিয়ে একটি নাটক লিখে ফেলতাম তৃণার ভাবনার ভূয়সী প্রশংসা করে বীরভূমের একটি কলেজের অধ্যাপক চন্দন কুণ্ডু বললেন - নতুনদের মধ্যে কবিতা লেখার প্রবণতা বেশি হলেও স্রোতের বিপরীতে হেঁটে যেভাবে ভিন্নধর্মী বিষয়বস্তু তৃণা বেছে নিয়েছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয় শুধু তাই নয় তার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণও প্রশংসার দাবি রাখে সাহিত্য নিয়ে যেসব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে এবং যারা সাহিত্যচর্চার গভীরে যেতে চায় তাদের কাছে এই বইটি মূল্যবান হয়ে উঠবে একই সুর শোনা গ্যালো বীরভূমের অন্য একটি কলেজের অধ্যাপক বাসুদেব সরকারের কণ্ঠে তাঁর বক্তব্য - বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে বাংলা সাহিত্য জগতের অন্য ছেলেমেয়েরা নতুন ভাবনার প্রেরণা পাবে কোন সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতিতে সমাজে আপাত ঘৃণিত চুরির মত পেশা কেন একজন বেছে নিতে বাধ্য হয় সেই সংক্রান্ত আলোচনা বইটিতে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে লেখিকা চোর সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়েছেন কেন তিনি এই ধরনের বিষয়বস্তু বেছে নিলেন সেই সম্পর্কে তৃণা দেবী বললেন - স্নাতকোত্তর পড়ার সময় রামপুরহাট সংশোধনাগারে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল সেখানেই সাক্ষাৎ ঘটেছিল অনেক বন্দীর সঙ্গে একজন আমাকে 'মা' সম্বোধন করে বলেছিলেন - তোর বয়সী আমারও একটা মেয়ে আছে ঘৃণা না করে পারলে আমাদের নিয়ে লিখিস মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল পিতৃতুল্য মানুষটির কথা তারই ফলশ্রুতি এই বই আশাকরি আগ্রহী পাঠকদের কাছে এই বইটি যথার্থ মূল্য পাবে এই বইটি রচনা করতে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ প্রসঙ্গত বাংলায় স্নাতকোত্তর ও সেট 'কোয়ালিফাই' তৃণা মুখার্জ্জী দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তার কবিতা ও গল্প ইতিমধ্যে পাঠক সমাজের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তার লক্ষ্য বাংলা সাহিত্য নিয়ে আগামীদিনে আরও বড় কিছু করা