55
thumb Captured By: জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
              • 30-06-2023   10:34 PM •      Captured By: জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী   55

হুল উৎসবে মেতে উঠল গুসকরা পুরসভার সাঁওতাল সমাজ।

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:- আনন্দ বাংলা ডেস্ক:-৩০ শে জুন তারিখটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইতিহাসে এই দিনটি 'হুল' দিবস নামে পরিচিত। এরসঙ্গে জড়িয়ে আছে সরল, সাধাসিধে সাঁওতালদের আবেগ।

নিজেদের স্বাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় জমিদার, সুদখোর মহাজন ও ইংরেজদের নির্মম রাজস্ব নীতির বিরুদ্ধে সাঁওতালদের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামের নাম হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ। পাহাড় ও জঙ্গল ঘেরা দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে নিজেদের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে বাস করত সাঁওতালরা। কৃষিকাজ ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। তারা কাউকে রাজস্ব দিত না।

এবার সেইদিকে নজর পরে ইংরেজ কোম্পানির এবং তাদের দোসর স্থানীয় জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের রাজস্ব আদায়ের নামে তারা সাঁওতালদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে তাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাড়ির মেয়েরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি বাধ্য হয়ে তারা ইংরেজ, জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব সঙ্গে ছিল দুই বোন ফুলমণি মুর্মু ও ঝানো মুর্মু তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আশেপাশের ৪০০ টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহি মাঠে জড়ো হয় এবং কলকাতার অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে ভারতের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম গণপদযাত্রা ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন লড়াই শুরু হয় সাওতাঁলরা তাদের পরিচিত তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মরণপণ সংগ্রাম করলেও শেষ পর্যন্ত আট মাস পর ইংরেজ বাহিনীর আধুনিক বন্দুক ও কামানের কাছে হেরে যায় ইংরেজরা ফুলমণি মুর্মুকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করে তাঁর লাশ রেললাইনের ধারে ফেলে রেখে যায় প্রসঙ্গত এই ফুলমনিকে নিয়ে সাঁওতালদের গান রয়েছে ইতিহাসের প্রথম বীরাঙ্গনা হিসেবে সাঁওতালরা আজও তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে সিধু নিহত হন এবং কানুকে ফাঁসি দেওয়া হয় লড়াইয়ে চাঁদ মুর্মু ও ভৈরব মুর্মু প্রাণ হারান লড়াইয়ে সাঁওতালরা পরাজয় বরণ করলেও ইংরেজ ও তার দোসরদের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি তাইতো ১৬৮ বছর পরও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের স্বাধীনতাকামী মানুষ আজও সাঁওতাল বীর সিধু-কানুদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বিভিন্ন প্রান্তে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ৩০ শে জুন দিনটি পালিত হয় 'হুল' দিবস হিসাবে   যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে গুসকরা এস টি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে গুসকরা স্কুলমোড় থেকে সুসজ্জিত সাঁওতাল নারী-পুরুষদের একটি পদযাত্রা বের হয় এবং শেষ হয় ১৪ নং ওয়ার্ডের আলুটিয়া মাঠে নৃত্য ও গীতের তালে তালে এগিয়ে চলা এই পদযাত্রা দেখার জন্য শহরবাসীর উৎসাহ ছিল যথেষ্ট পদযাত্রায় পা মেলান পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি মল্লিকা চোংদার, শহর সভাপতি দেবব্রত শ্যাম ও যুব সভাপতি কার্তিক পাঁজা, জয়হিন্দ বাহিনীর উৎপল লাহা, পুরসভার কাউন্সিলর সাধনা কোনার, শিপ্রা চৌধুরী, রেখা দলুই, চুমকি মণ্ডল, মাধব সাহা, চণ্ডীচরণ ব্যানার্জ্জী এবং পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ অন্যান্যরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত ছিলেন কাউন্সিলর বাবুলাল হেমরম উপস্থিত ছিলেন গুসকরা বিট হাউসের ওসি নীতু সিংহ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল থেকে ছিলেন আউসগ্রাম ১ নং ব্লকের গডিৎ বুধন হেমরম, পারগানা বাবা শান্তিসর কিস্কু, নবকুমার সরেন ও উৎপল বেশরা গুসকরা পৌর এলাকা থেকে সুনীল মার্ডি, চান্দু হেমরম, ভাইরো মুর্মু, ঘচু মুর্মু, মংলা কিসকু, সুনীল মুর্মু, মহেশ হেমরম সহ আটজন মাঝি বাবা এবং আশেপাশের গ্রামের আরও চারজন মনঝি বাবা এসেছিলেন উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সাঁওতালি রীতি মেনে তাদের বরণ করে নেওয়া হয় এছাড়াও বরণ করা হয় সাঁওতালি সমাজের বারোজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে সিধু-কানুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয় সাঁওতালি সমাজের নিজস্ব পতাকা উত্তোলন করেন বুধন হেমরম এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গুসকরা শহর সভাপতি দেবব্রত শ্যাম অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন রতন মাড্ডি, শোভাঙ্গী মুর্মু ও শিবু মুর্মু রীতি মেনে তীর ও গুলতি ছোড়া হয় এছাড়া ছিল হাঁড়িভাঙা ও জল ভর্তি হাঁড়ি নিয়ে মহিলাদের দৌড় বাবুলাল হেমরম বললেন - আজকের এই দিনটার জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি শহরের বুকে সিধু-কানুর মূর্তি স্থাপন করার জন্য তিনি পুরসভার চেয়ারম্যান সহ উপস্থিত তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেন পরবর্তী হুল দিবসের আগে যাতে এই মূর্তি স্থাপন করা যায় তার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুশল বাবু বললেন - সিধু-কানু শুধু সাঁওতাল সমাজের নয় সমস্ত ভারতবাসীর গর্ব স্বাধীনতার জন্য তাদের লড়াই ও আত্মত্যাগ কোনোদিনই ভারতবাসী ভুলবেনা আমরাও চাই শহরের বুকে এই দুই মহান যোদ্ধার মূর্তি স্থাপিত হোক