পুলিশ দিবস পালিত হলো গুসকরায়।
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:- আনন্দ বাংলা ডেস্ক:-অবস্থানগত পরিবর্তন এবং স্বার্থের হানি হলেই কেউ বলে দলদাস, কেউ বলে চটিচাটা। অথচ গতকালই পুলিশ এদের কাছে ছিল নয়নের মণি। একদল মানুষের কাছে পুলিশের পরিচয় হয় ঘুষখোর অথবা তোলাবাজ।
ওদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার সময় খেয়াল থাকেনা ওরা আমাদের পরিবারেরই সন্তান। আইনের রক্ষক পুলিশ বাহিনী যে সত্যিকারের সমাজ সেবক সেটা আমরা গুরুত্ব দিইনি, পরিবর্তে ছোটখাটো ভুল নিয়ে হৈচৈ করি। ভুলে যাই ওরাও মানুষ। অথচ নীরবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা অতিমারির সময় তাদের ভূমিকা ছিল খুবই প্রশংসনীয় প্রশস্ত ডানা বিস্তার করে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষকে তারা নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে অধিকাংশ সরকারি কর্মীরা যখন 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করছে, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তখন রাস্তায় নেমে কর্তব্য পালন করছে করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে ওষুধ, খাবার এটা করতে গিয়ে অনেকেই না-ফেরার দেশে চলে গেছেন খোলা আকাশের নীচে তীব্র ঠাণ্ডা বা গরমের মধ্যে ওরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে বাহিনীর দু'একজন সদস্যের জন্য জুটছে দুর্নাম অন্যদিকে আছে আর এক করুণ কাহিনী এদের ছুটি বলে যেন কিছু নাই - ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা 'ডিউটি' দুর্গাপুজো বা নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবের সময় সন্তানদের হাত ধরে অন্যরা যখন আনন্দ উপভোগ করছে ওরা তখন খাকি পোশাকের নীচে থাকা হৃদয়ের উপর পাথর চাপা দিয়ে কর্তব্য পালন করছে ওদের উপর যে সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখার মত গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা - ওরাই আমাদের ভরসা সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও ওদের পরিস্থিতি উপলব্ধি করেন রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী তিনি মনে করেন দু'একটা ‘ভুল’ হলেও পুলিশের ‘আত্মত্যাগ’ মনে রাখার মত করোনার সময় পুলিশের ভূমিকাকে সম্মান জানিয়ে এবং পুলিশের আত্মত্যাগ মনে রেখে তিনি ঘোষণা করেন - ১ লা সেপ্টেম্বর দিনটি রাজ্যজুড়ে প্রতিটি থানায় 'পুলিশ দিবস' হিসাবে পালন করা হবে তার ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সাল থেকে সেটি শুরু হয় সমগ্র রাজ্যের সঙ্গে গুসকরা বিট হাউস ও ট্রাফিক গার্ডের যৌথ উদ্যোগে ১লা সেপ্টেম্বর গুসকরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে দিনটি পালন করা হয় নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতি মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী পরে মাল্যদান করেন পুলিশ আধিকারিক শৈলেন্দ্র নাথ রায়, দিলীপ হাম্বির, অনিমেষ নায়েক, গুসকরা ট্রাফিক পুলিশের ওসি অনন্তদেব সাহা সহ গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলর সুব্রত শ্যাম, সাধনা কোনার, যমুনা শিকারি, বিশিষ্ট সমাজসেবী মল্লিকা চোংদার, উৎপল লাহা, কার্তিক পাঁজা, দেবব্রত শ্যাম প্রমুখ এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক, ডিএসপি ট্রাফিক দেবাদ্রীশ বিশ্বাস, সমস্ত সিভিক ভলাণ্টিয়ার ও স্থানীয় বিদ্যালয়ের কচিকাচারা অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন পৌলীমা বিশ্বাস তিনি একটি সুন্দর নৃত্যও পরিবেশন করেন এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন বীরভূমের বাউল শিল্পী নাসির ফকির অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ লগ্নে একটি ক্যুইজ প্রতিযোগিতা হয় সেখানে বিদ্যালয়ের কচিকাচারা অংশগ্রহণ করে সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুব্রত শ্যাম ফাঁকে ফাঁকে আজকের দিনটি সম্পর্কে তার টুকরো টুকরো মন্তব্য অনুষ্ঠানকে অন্যমাত্রা দেয় অনুষ্ঠানে প্রতিটি বক্তা আজকের দিনটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন একইসঙ্গে নিজেদের স্বার্থে পুলিশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে আবেদন করেন আজকের দিনটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বলেন - আমরা এই সমাজেরই অংশ সমাজের প্রতি আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে একজন নাগরিক হিসাবে প্রত্যেককে অনুরোধ করব সমাজকে তথা নিজের পরিবারকে ভাল রাখতে আসুন আমরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করি তিনি আরও বলেন - দু'চাকার গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই মাথায় হেলমেট ব্যবহার করুন বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী-পুত্র আপনার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছেন একইসঙ্গে তিনি সিভিক ভলাণ্টিয়ারদের হেলমেট ব্যবহার করার পরামর্শ দেন যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা আমাদের উচিত ছিল সেটাই করল পুলিশ কর্তৃপক্ষ এর জন্য পুরসভার চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বললেন- সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যেভাবে পুলিশ বাহিনী কাজ করে চলেছে তার জন্য আমরা গর্বিত পুলিশ বাহিনীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেন