সুন্দরবন নয়, এখন ম্যানগ্রোভ গঙ্গার ধারে, হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনে।
রাজীব মুখার্জি:- হাওড়া:-হাওড়ার বি-গার্ডেনের গঙ্গার ধারই এখন সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভের সারি গঙ্গার ধার জুড়ে। নোনা জলের এই ম্যানগ্রোভকে গঙ্গার মিঠে জলে ভেসে বেড়াতে দেখে সে দিন চোখ কপালে উঠেছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের।
পরে তাঁরা বুঝতে পারেন এ সমস্তই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফল। গঙ্গার ধারেই ভেসে বেড়াচ্ছে শ্বাসমূল। হারগোজা, বাইন, ওঁরাও, কৃপান, সমুদ্র পানলতার। শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশ ধরে গঙ্গার তীর বরাবর।
ঠিক যেন একটুকরো সুন্দরবন এখানকার উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বসন্ত সিংহ জানান, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে নোনা জল ঢুকে পড়ছে গঙ্গাতেও তারফলেই গঙ্গার ফ্রেশ ওয়াটারেও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ জন্মানোর অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সুন্দরবন ছেড়ে ম্যানগ্রোভ বাসা বাঁধছে হাওড়ায় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটু একটু করে সরে আসছে দীর্ঘ ১৫০কিলোমিটার দূরে হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে হাওড়ায় গঙ্গার পাড়ে ম্যানগ্রোভের অরণ্য ঘটনায় চিন্তার ভাঁজ বিজ্ঞানীদের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুন্দরবন যদিও এই ম্যানগ্রোভ এখন শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন গঙ্গার পাড়েই হ্যাঁ শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এখন গঙ্গার জলেই গজিয়ে উঠছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবের ফলেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ চলে এসেছে হাওড়ার পাড়ে হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনে তবে এই ধরণের ঘটনা নিয়ে চিন্তিত বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরাপ্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণেই এই স্থানবদল বলে প্রাথমিক অনুমান উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বোটানিক্যাল গার্ডেন পেরিয়ে হুগলী নদীর দুই তীরে বেলুড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরবনের লবণাম্বু উদ্ভিদগুলি প্রকৃতিগত ভারসাম্যের তারতম্যজনিত কারণেই এমন ঘটছে বলে চিন্তিত উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা ম্যানগ্রোভ এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ যা লবণাক্ত জলে জন্মায় এই উদ্ভিদের শ্বাসমূল মাটির ওপরে বেরিয়ে থাকে এবং এই শ্বাসমূলের মাথায় নিউমাটাপোর নামে শ্বাসছিদ্র থাকে এই গাছের ফল শাখা থেকে খসে পড়ার আগেই অঙ্কুরিত হয়ে থাকে তাই মাটিতে পড়তেই সরাসরি মূল বিস্তার করতে পারে এখানে এখন দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ‘ওরা’র এর বিজ্ঞানসম্মত নাম সনেরাশিয়া গ্রিফিথি (Sonneratia Griffithii) এ ছাড়াও কৃপাল, বায়েন, হাড়গোজা, সমুদ্র,পানলতার মতো গাছগুলিও প্রাকৃতিক কারণেই সরে এসে বাসা বেঁধেছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ম্যানগ্রোভ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু হয়েছে সেই সময় ভারত ও আফ্রিকার অ্যামাজন অববাহিকার প্রায় ২০টি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের চারা রোপণ করা হয় এই বাগানের অনুকূল পরিবেশে সঠিক প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে এখন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে সেই গাছগুলি তবে এই উদ্ভিদগুলির এমন সরে আসার বিষয়টিকে বিপদ সংকেত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরাও সম্ভবত সমুদ্রের জলে লবণের পরিমান বেড়ে যাওয়ার ফলেই এই বিশেষ উদ্ভিদগুলির পক্ষে বংশবিস্তার ও জীবনধারণের অনুকূল পরিবেশ আর মিলছে না সুন্দরবন এলাকায় আর তাই অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে সুন্দরবন থেকে সরে আসছে ম্যানগ্রোভ গঙ্গার পার বরাবর ম্যানগ্রোভ বেড়ে উঠতে দেখে তখনই শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, গঙ্গার পাড় বরাবর দু কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি করা হবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য এখানকার উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বসন্ত সিংহ জানান, গত দশ বছর ধরেই এই পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গার মিঠে জলে মিশে যাচ্ছিল সমুদ্রের নোনা জল তাই শুধু শিবপুরের গঙ্গার পাড় নয়, গঙ্গার উপর অন্যত্রও মিলেছে ম্যানগ্রোভের খোঁজ সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়া যেমন একটা কারণ, তেমনই ইনওয়ার্ড মাইগ্রেশনও এর অন্যতম কারণ বলে তিনি জানান তিনি বলেন, বসবাসের জন্য সুন্দরবনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য তাই ইনওয়ার্ড মাইগ্রেশন হচ্ছে ওই সব গাছের বীজ ভেসে এসে অনুকূল পরিবেশে গাছ জন্মাচ্ছে এই সমস্ত মাথায় রেখে বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন গঙ্গার পাড়ে ম্যানগ্রোভ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা এতে পর্যটকরা বেড়াতে এসে যেমন ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখতে পাবেন,পাশপাশি গাছ সংরক্ষণ ও গবেষণাও করা যাবে তাই বাঘের দেখা হয়তো মিলবে না, কিন্তু শহর থেকে অল্প দূরেই গঙ্গায় নৌকো নিয়ে ভেসে পড়লেই এ বার দেখা মিলবে এক টুকরো সুন্দরবনের