120
thumb Captured By: রাজীব মুখার্জি
              • 10-04-2022   3:09 PM •      Captured By: রাজীব মুখার্জি   120

হাওড়াতে পুজো হয় বাঙালি রামের। গোঁফ ও ছোট ভুঁড়িওয়ালা রাম বিশেষভাবে পূজিত হন ভক্তের শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে।

রাজীব মুখার্জি: হাওড়া:হাওড়ার রামরাজাতলা। এখানেই প্রায় আড়াইশো বছর আগে স্থানীয় জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী এখানে রামপূজা চালু করেন। জনশ্রুতি রয়েছে স্বপ্নাদেশ পেয়েই শুরু রাম ঠাকুরের পুজোর উদ্যোগ।

যদিও সেই সময় অধিকাংশ বাঙালি বাড়িতে শিবমন্দির কিংবা কালীমন্দির প্রতিষ্ঠার চলই ছিল বেশি। রামমন্দিরের কথা শুনে তাই অবাক হতে হয়। সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থায় এটি একটি ব্যাতিক্রম উদ্যোগ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাওড়ার রামরাজাতলায় রাম পুজো সারা ভারতের মধ্যে সত্যি অনন্য।

মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্র এখানে পুজিত হন বাংলার রাজবেশে পাশে বেনারসীতে সজ্জিতা স্ত্রী সীতামা তবে বিশেষ ভাবে সজ্জিত এই রামের রয়েছে একটি গোঁফ সঙ্গে রাম ঠাকুরের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রাম ঠাকুরের মাথায় দেবী সরস্বতী অধিষ্ঠিত থাকেন জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী এই অঞ্চলে সর্বপ্রথম রাম পূজা শুরু করেছিলেন তাঁর মতে, তিনি ভগবান রামের পূজা করার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছিলেন এর পর তিনি ভগবান রামের বিশাল বারোয়ারি পুজো শুরু করেছিলেন সময়ের সাথে সাথে সেই পুজোটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এবং অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছিল রামরাজাতলা কিন্তু সেই সময়কালে সরস্বতী পূজা এই অঞ্চলে খুব বিখ্যাত ছিল এবং পূর্ববর্তী ৩০০ বছর ধরে গ্রামবাসীরা একই পূজার উপভোগ করত তাই সরস্বতী পূজার অনুরাগী কিছু গ্রামবাসী রাম পূজার বিরোধিতা করেছিলেন দুটি দল বহু আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁচ্ছালেন যে রাম পূজা হবে এবং বিদ্যার দেবী সরস্বতী দেবীকে ভগবান রাম ও সীতার শীর্ষে স্থাপন করতে হবে সেই দিন থেকেই প্রথা অনুসারে ষষ্ঠীতলার বাঁশের ঝাড় থেকে বাঁশ কাটা শুরু করেন এবং সরস্বতী পুজোর দিন চৌধুরী পাড়া শিব মন্দিরে সেই বাঁশের প্রথম পুজো শুরু হয় প্রথম প্রথম পুজোর মেলা তিনদিন ধরে অনুষ্ঠিত হত এরপরে এটি দুই সপ্তাহ এবং পরে এক মাস অবধি চলতে থাকে তা প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা সেই সময় এই জায়গার জমিদার ছিলেন অযোধ্যারাম চৌধুরী তিনি স্বপ্নাদেশ পান রামচন্দ্রের পুজো করার সেইমত তিনি উদ্যোগী হন বিশালাকার রামসীতার মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু করতে এখনো সরস্বতী পুজোর দিন নিকটস্থ ষষ্ঠীতলার নির্দিষ্ট বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে সূচনা হয় রামপুজোর এখানকার ঠাকুরের সাথে উত্তর ভারতীয় রামের যে বর্ণনা আমরা দেখে এসেছি তার অনেকটাই অমিল আর রামের মূর্তির উপরে থাকে পাঁচটি সরস্বতী দেবীর মূর্তি এছাড়াও শিব, ব্রহ্মা সহ প্রায় আরো ২৬টি দেবেদেবীর মূর্তি থাকে এই বিশালাকার রাম ঠাকুরের মূর্তিতে মূর্তিটি প্রায় দু’তলা বাড়ির সমান উঁচু হয় আর এই রাম ঠাকুরের নাম থেকেই এই জায়গাটির নামও হয় রামরাজাতলা এখন রাম পূজা চৈত্র-বৈশাখ মাসের রামনবমীতে শুরু হয় এবং শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এটি বাঙালির দীর্ঘতম সময় ধরে চলা মেলা প্রতিমাগুলি এতই বড় হয় যে এগুলিকে লরিতে করে নিয়ে যাওয়া যায় না প্রতিমাগুলি দড়ি টানা ট্রলির উপরই তৈরি করা হয় ও বিসর্জন দেওয়া হয় ইতিহাস বলে, রামমন্দির তৈরির আগে ওই অঞ্চলে মূল আরাধনা ছিল সরস্বতীর বিস্তর মতানৈক্য পেরিয়ে, সরস্বতীর উপাসক ও রাম উপাসকদের মধ্যে বোঝাপড়া হয় সেই থেকে রামপূজা অন্যতম উৎসব হয়ে ধরা দেয় সেখানে রামের নামে এমনই অঞ্চলটির নামই হয়ে গেল রামরাজাতলা স্থানীয়রা একে রামতলা বলেই ডাকে এখানেই প্রায় একশো বছরে পা দিল রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন বাসরুট ৫২ নম্বর স্থানীয় সূত্রে জানা যায় হাওড়ার এই মন্দিরে ভক্তদের আসার জন্যই তৈরি হয় এই ৫২ নম্বর রুটটি এখনও প্রতিবছর রামনবমীর দিন থেকে শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত মেলা চলে পশ্চিমবাংলার দীর্ঘতম মেলা এই রামরাজাতলাকে ঘিরেই তারপর, বিসর্জন দেওয়া হয় সেই মূর্তির প্রতিবছর এই চারমাস ভক্তরা দেখতে পান রাম-কে  অঞ্চলের অধিবাসীরাই যে ভালোবেসে ‘রামরাজা’ নাম দিয়েছেন, এখানে মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম হয়ে উঠেছেন বাঙালি আর তাই আমরা সারা দেশে রামের যে মূর্তি দেখি তার সঙ্গে এখানকার রামের মূর্তির অনেক ফারাক আছে গোঁফ আছে তাঁর কিন্তু বাঙালি যেমন শিবের মতো রামকেও দিয়েছে তাদের অতি প্রিয় নেয়াপাতি ভুঁড়ি আসলে নিজেদের ঘরের লোক বলেই এটা হয়েছে রামরাজার মন্দিরে যে মূর্তিটি ছিল রাম-সীতার, সেটির প্রতিবছর বিসর্জন হয় আবার প্রতি বছর নতুন করে বানানো হয় তিনশো বছর ধরে চলে আসছে এমনই কিন্তু সম্প্রতি সেই প্রাচীন মন্দিরের উল্টোদিকের ভূমিতে পুকুর বুজিয়ে নির্মিত হয়েছে আরও একটি মন্দির সেখানে পাথরের রাম-সীতা বিরাজমান থাকবেন সারাবছর সারাবছরই রাম-সীতার দর্শন পাওয়া যাবে এমন ভাবনা থেকেই এমন উদ্যোগ বলে জানা যাচ্ছে দর্শনার্থীরা উৎসবের চারমাস সনাতন মূর্তি দেখবেন, আর বাকি সময়টুকু উল্টোদিকের মন্দিরের নবকলেবরটিকে তবু ভক্তের ভগবান বাঙালি রামের মহত্বে ডুবে রয়েছেন রামরাজাতলার বাসিন্দারা