109
thumb Captured By: রাজীব মুখার্জি
              • 10-04-2022   3:32 PM •      Captured By: রাজীব মুখার্জি   109

পেশার ভিত্তিতে মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়। আধুনিকতার নতুন পাঠ পড়াচ্ছেন টোটো চালক সুরঞ্জন কর্মকার।

রাজীব মুখার্জি: হাওড়া: দিন, তারিখ ও মাসের হিসাব রাখতে অনেকেই ব্যবহার করেন ডাইরি, ক্যালেন্ডার। আগেকার দিনে অনেকের বাড়িতেই হালখাতার থেকে পাওয়া ক্যালেন্ডার এলেই বাড়ির বয়স্ক মহিলারা মাসের বিশেষ তিথি, পুজোর তারিখ লাল কালির পেন দিয়ে গোল দাগ দিয়ে রাখতেন। অবশ্য এই ডিজিটাল যুগে সেই সবের চল অনেক কমে গেছে।

এখন বিশেষ দিন মনে করাতে দায়িত্ব দেন নিজের হাতে ধরা মুঠোফোনটিকে। সেই ফোন ওই নির্দিষ্ট দিনে হঠাৎ করে বেজে উঠে তার মালিককে মনে করায়। তবু নিজের প্রয়োজন মাফিক দিন না হয় মনে রাখার পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজের কাছে নমস্য কয়েকশো মনীষীর জন্ম মৃত্যুদিন যদি মনে রাখতে হয় তাহলে কি করবেন এটাই ভাবছেন তো? না সেটা আমরা কেউ মনে রাখার চেষ্টা করি না।

হালে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট দেখে জানতে পারি আজ কোনো বিশেষ দিন কিনা তবে আমরা ভুললেও এই মনে করিয়ে দেওয়ার কাজটি করে চলেছেন বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে হাওড়া শহরের নিতান্ত ছাপোষা একটি মানুষ প্রতিদিন তার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানতে পারে আজকে দিনটি কিসের জন্য বিশেষ এই সাধারণ পরিবারের এই মানুষটির নাম সুরঞ্জন কর্মকার মানুষকে প্রতিটি দিনের মাহাত্ম জানিয়ে চলেছেন পেশায় টোটো চালক সুরঞ্জন বাবু আগে অন্যের টোটো চালালেও এখন নিজেই কিনেছেন টোটো আর সেই টোটোতে উঠলে আপনাকে বিস্মিত হতে হবে বৈকি তার টোটোতে সাজানো থাকে ওই দিনের বিশেষত্বের কথা যা দেখে রীতিমতো অবাক হন যাত্রীরা কেউ তাকে বলেন আজকে অমুক দিন জানতেনই না তিনি এভাবেই মানুষকে দিনের বিশেষত্ব জানিয়ে চলেছেন সুরঞ্জন বাবু হাওড়া লিলুয়ার একটি সাধারণ ১০ বাই ১০ ফুটের ঘরেই তার ছোট্ট সংসার নেহাতই ছাপোষা এই মানুষটি আজ অসাধারণ হইয়ে উঠেছেন তার নিজস্ব প্রতিভায় লিলুয়া অঞ্চলে লোকে তাকে এক নামে চিনলেও অনেকে তাকে ডাকেন গুগুল বলে তার চিন্তাধারার বিশেষত্ব তাকে আলাদা করে দিয়েছে তারই সঙ্গে একই পেশায় থাকা অন্যান্য টোটো চালকদের থেকে ওই এলাকার বাসিন্দা এবং সুরঞ্জন বাবুর টোটো নিত্যযাত্রী সোনালী চক্রবর্তী বলেন উনি জীবনে কখনো এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন নি কিন্তু উনি একটা আস্ত গুগুল যেকোনো তথ্য কেউ খুঁজলে তার কাছে পাবেন তাও আবার লিখিত উনি অন্যান্য টোটো চালকদের মতো টোটো চালালেও এই গুনটা তাকে সকলের থেকে স্বতন্ত্র করেছে উনি জীবনে কাউকে না বলতে শেখেন নি টোটো চালানোর বাইরে তিনি লিলুয়া অঞ্চলের বহু সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িত রয়েছেন রাত যতই হোক না কেন তাকে কোথাও যাওয়ার কথা বললে হাঁসি মুখে সম্মতি দেন সুরঞ্জন বাবু এমনটাই দাবি করলেন সোনালী চকপাড়ার ওই টোটো স্ট্যান্ডে তারই সহকর্মী রোহিত সিংও দাবি করেন সুরঞ্জন বাবুকে সকলেই ভালোবাসেন ওনার জন্য তারাও অনেক কিছু জানতে পারেন বলেই জানান তিনি চকপাড়া স্ট্যান্ডের টোটো চালক রবিবাবুও বলেন দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তিনি সুরঞ্জনকে চেনেন এলাকায় তিনি খুবই পরিচিত তার এই প্রতিভার জন্য তারাও গর্ব অনুভব করেন তিনি এলাকায় আল্লাহ মিয়াঁ নামে আরো পরিচিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজ ও বইমেলার সঙ্গে তিনি যুক্ত রয়েছেন এছাড়াও তার অজানা জিনিসকে জানানো অনেক শিক্ষিত মানুষকেও সমৃদ্ধ করেন লিলুয়া চকপাড়ার এক চিলতে ঘরে দুই ছেলে,এক মেয়ে ও বউকে নিয়ে নিতান্ত সাদামাটাই জীবন কাটে অনন্য প্রতিভার অধিকারী সুরঞ্জন কর্মকারের দিন আনি দিন খাইয়ের জীবনে অর্থের অভাবকে নিজের মনে ভুলিয়ে রেখেই মানুষকে নতুন কিছু জানানোর নেশাতেই বিভোর হয়ে আছেন সুরঞ্জন বাবু তার মতো টোটো চালকের প্রতি সমাজের তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ত একদিন বদল হবে হয়ত সেদিন একজন মানুষকে তার প্রতিভার আসনে বসিয়ে যোগ্য সন্মান জানাতে সক্ষম হবে আমাদের শিক্ষিত বলে দাবি করা সমাজ তবে জীবনের চাওয়া পাওয়ার একঘেয়েমির হিসাবকে একপাশে ঠেলে রেখে মানুষকে আধুনিকতার নতুন পাঠ পড়াচ্ছেন সুরঞ্জন কর্মকার