ওদের পাশে 'আমরা মানবিক'।
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:-উত্তর চব্বিশ পরগণা:- সম্প্রতি পঁচাত্তর বছর অতিক্রম করে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ছিয়াত্তর-তম বছরে পদার্পণ করল। এই উপলক্ষ্যে গত একটা বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা অনুষ্ঠান হয়। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতির সুনামি বয়ে যায়।
গরীবদের সামনে রেখে সব প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য যদিও ধনীরা। তাইতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজও ওরা অবহেলিত থেকে যায়। যেকোনো সামাজিক উৎসবে একদল মানুষ যখন রঙিন পোশাক পরিধান করে রঙিন আনন্দে মেতে ওঠে ওরা তখন দূর থেকে কেবল দর্শক হিসাবে সেগুলো উপভোগ করে এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই করুণ পরিস্থিতিত নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্হাগুলো ওদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
উত্তর চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের আদিবাসী পাড়া হলো এরকমই একটি অবহেলিত পাড়া এখানকার বাসিন্দারা মূলত সাঁওতাল পরিবারের আর্থিক কারণে এদের অনেকেই বিদ্যালয়ে যেতে পারেনা সরকারি নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নাবালিকা অবস্থায় অনেকের বিয়ে হয়েও যায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের দেখে নিজের ছেলেমেয়েদের কথা মনে পড়ে যায় নিজেদের অসহায় পরিস্থিতির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেপড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও ওদের পথ দেখাবে কে? কেইবা এগিয়ে নিয়ে যাবে? কিন্তু যুগ যুগ ধরে একদল মানুষের জন্ম হয় যারা সমাজের অন্ধকার জায়গাগুলোতে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়ায় এরকমই একজন হলো স্হানীয় বাসিন্দা পিণ্টু হালদার নিজের ইচ্ছের কথা বৈকালিক আড্ডায় বন্ধুদের সামনে তুলে ধরতেই সবাই রাজি মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে গড়ে ওঠে 'আমরা মানবিক' ব্যক্তির পরিবর্তে সমষ্টি এদের কাছে বেশি গুরুত্ব পায় এদের অনেকের এখনো পড়াশোনার পাট চোকেনি তার মধ্যেও সময় বার করে ওরা গড়ে তোলে 'মানবিক বিদ্যালয়' প্রয়োজনের তুলনায় অল্প খাবার, ফান্ড, বাজার - এত সব অভাব নিয়েও ওরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছে অনেক কিছুর অভাব থাকলেও ওদের আন্তরিকতার অভাব নাই এসব বছর পাঁচেক আগের ঘটনা তবে নুন্যতম অভাবটা আজও থেকে গ্যাছে শুধু পড়াশোনা নয়, বিভিন্ন সামাজিক উৎসবে বিশেষ করে ওদের নিজস্ব উৎসবে পাঠশালার ছেলেমেয়েদের জন্য থাকে নতুন পোশাক অন্য সময় ব্যবহারযোগ্য পুরনো পোশাক তুলে দেওয়া হয় ওদের হাতে ওরা অল্পতেই খুশি কিন্তু সমস্যা হয়েছিল এই বছর সমগ্র দেশে পালিত হতে চলেছে ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস অথচ বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়ার মত রসদ নাই পাঠশালার বাচ্চাগুলো যখন কিছু পাবার প্রত্যাশা করে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তখন তাদেরকে দিতে না পারার কষ্টটা ভীষন অস্থির করে তোলে পিণ্টুদের তার মধ্যেও ওরা খুঁজে পায় আশার আলো অভিষেক অরূপ, নিলাদ্রি, গৌরব, বিজয়, অরিন্দমরা এগিয়ে আসে সাহায্যের ডালি নিয়ে ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসে সমস্ত বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয় নতুন স্কুল ব্যাগ, নতুন জুতো ও আঁকার খাতা এবং আরও অনেক কিছু তখন ওদের চোখেমুখে বয়ে যায় আনন্দের ঝিলিক 'আমরা মানবিক' এর অন্যতম কনিষ্ঠা সদস্য অদিতি গাইন, কলেজে পা রাখার জন্য সে চৌকাঠে অপেক্ষা করছে, বলল আন্তরিকতা আমাদের বড় সম্বল সেটাই পাথেয় করে এগিয়ে চলেছি দরকার একটু আর্থিক সাহায্য তাহলে আমাদের পাঠশালার ছেলেমেয়েদের ভাল করে গড়ার সুযোগ পাব আশাকরি সহৃদয় ব্যক্তিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন